পুরুষদের জন্য পূজা স্পেশাল ফ্যাশন গাইড
পূজা মানেই আনন্দ, আড্ডা আর নতুন পোশাকের উচ্ছ্বাস। শুধু মেয়েদের জন্য নয়, এই উৎসবের দিনে পুরুষদের ফ্যাশনেও আসে নতুন নতুন ট্রেন্ড। সকালে মন্দিরে যাওয়া থেকে শুরু করে বিকেলের আড্ডা আর সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিটি সময়ের জন্য দরকার আলাদা লুক। তাই পূজা স্পেশাল ফ্যাশনে পুরুষরা কীভাবে নিজেকে সাজাবেন আর কোন ধরনের পোশাক আপনাকে দেবে স্টাইলিশ ও কমফোর্টেবল লুক তা নিয়েই আজকের গাইড।
পূজায় পুরুষদের পোশাকের ঐতিহ্য ও ইতিহাস
বাংলার পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক উৎসবের আবহ যেখানে সাজগোজ আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া মিলেমিশে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই পূজার দিনে পুরুষদের পোশাকে প্রাধান্য পেতো সাদামাটা কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ স্টাইল। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে পুরুষের উৎসবের পোশাকের ধাঁচ বদলেছে, কিন্তু হারায়নি তার মূল রূপ।
বাংলার গ্রামবাংলায় পূজার দিনে পুরুষেরা সাধারণত ধুতি আর পাঞ্জাবি পরতেন। সাদা ধুতি ছিল ভক্তি আর পবিত্রতার প্রতীক। পূজার সকালে ধুতি পরে মন্দিরে যাওয়া যেন এক অনিবার্য অংশ ছিল। সেই ধুতির সঙ্গে থাকত সুতির বা সিল্কের পাঞ্জাবি, কখনো আবার গলায় গামছা বা পাতলা চাদর।
ব্রিটিশ আমলে ও নবজাগরণের সময়ে শহুরে শিক্ষিত সমাজে কুর্তা-পাজামার প্রচলন বাড়ে। পাশাপাশি নেহরু জ্যাকেট বা কোট-স্টাইল জ্যাকেট (যার বর্তমান নাম ওয়েস্টকোট) ধীরে ধীরে পূজার ফ্যাশনে জায়গা করে নেয়। তখন থেকে পূজার সাজে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যায় আভিজাত্যের ছোঁয়া।

এখনও পূজার সাজে পুরুষদের প্রধান পোশাক হলো পাঞ্জাবি ও কুর্তা। সকালবেলার জন্য হালকা কটন বা লিনেন পাঞ্জাবি জনপ্রিয়, আর সন্ধ্যার গ্ল্যামারাস আয়োজনে জায়গা করে নেয় সিল্ক, জ্যাকার্ড ও হাতের কারুকাজ করা পাঞ্জাবি। ধুতি-পাঞ্জাবি এখনো অনেকের কাছে পূজার আসল ঐতিহ্যের প্রতীক।
অ্যাকসেসরিজ ও রঙ:
ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে ছোটখাটো অ্যাকসেসরিজও ছিল সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেখানে নাগরা বা খড়ম ছিল জনপ্রিয়, এখন তা জায়গা নিয়েছে লেদার স্যান্ডেল বা লোফারে। রঙের ক্ষেত্রেও লাল, সাদা, হলুদ ও সবুজের ব্যবহার পূজার পোশাকে এক ধরনের আধ্যাত্মিক আবহ এনে দেয়।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন:
আজকের দিনে পূজার ফ্যাশন শুধু ঐতিহ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটছে। পাঞ্জাবির ওপর ওয়েস্টকোট, ধুতির সঙ্গে কুর্তা বা কারচুপি করা পাঞ্জাবির সাথে পাজামা সব মিলিয়ে পূজার পুরুষ ফ্যাশনে দেখা যাচ্ছে রঙিন বৈচিত্র্য।
স্টাইলের সাথে আরাম: ফেব্রিক বেছে নেওয়ার নিয়ম
পূজার দিনগুলোতে শুধু সুন্দর পোশাকই নয়, আরাম সমান জরুরি। অনেক সময় আমরা শুধু স্টাইলের কথা ভেবে ফেব্রিক বেছে নিই, পরে গরমে অস্বস্তি বা ঘাম জমে বিরক্তিকর লাগতে পারে। তাই স্টাইলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেব্রিক ঠিকভাবে বেছে নেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সকালের জন্য হালকা আর বাতাস চলাচল করে এমন ফেব্রিক যেমন কটন বা লিনেন বেছে নিন। এতে গরম লাগবে না, আবার দেখতেও থাকবে পরিপাটি। বিকেলে আড্ডা আর ঘোরাঘুরির জন্য কটন-সিল্ক মিশ্রণের পোশাক ভালো মানায়। এগুলো দেখতে একটু স্টাইলিশ, আবার আরামদায়কও। সন্ধ্যার গ্ল্যামারাস পরিবেশের জন্য সিল্ক, ভিসকস বা জ্যাককার্ডের মতো ফেব্রিক একদম পারফেক্ট। এতে আপনার লুকে আসবে ঐশ্বর্য আর উৎসবের আবহ।
পূজায় পুরুষদের প্রতিদিনের সাজ: সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যা
পূজার দিনগুলোতে প্রতিটি সময়ের আবহ একেবারেই আলাদা। সকাল মানে পূজা আর প্রার্থনার শান্ত পরিবেশ, বিকেল মানে আড্ডা আর বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ, আর সন্ধ্যা মানে আলোর ঝলকানি আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে ভরপুর উৎসব। তাই প্রতিটি সময়ের জন্য পোশাক বেছে নেওয়াও হওয়া উচিত আলাদা। এবার দেখা যাক সকাল, বিকেল আর সন্ধ্যার জন্য কেমন সাজ মানানসই।

ট্রেন্ডি আবার ব্যবহার উপযোগী পোশাকের টিপস
- পোশাক কেনার সময় খেয়াল রাখুন, শুধু ট্রেন্ডি নয়, পরে যেন তা ব্যবহারযোগ্যও হয়।
- ভারী কাজের পাঞ্জাবির সাথে মাঝারি কাজ করা পোশাক নিন, যা অন্য অনুষ্ঠানেও পরে যেতে পারবেন।
- নিউট্রাল বা ইউনিক রঙ বেছে নিন যেমন প্যাস্টেল, নেভি ব্লু, টিল বা ক্লাসিক হোয়াইট যা সব জায়গায় মানিয়ে যায়।
- চাইলে জ্যাকেট বা শাল যোগ করে একই পোশাককে নতুন লুক দেওয়া সম্ভব।
পূজার সাজ শুধু ট্রেন্ডি পোশাক বেছে নেওয়ার বিষয় নয়, বরং সময়, পরিবেশ আর নিজের আরামের কথাও ভাবতে হয়। সকাল, বিকেল আর সন্ধ্যার আলাদা আবহে মানানসই পোশাক বেছে নিলে আপনার লুক হবে একেবারে পারফেক্ট। সঙ্গে সঠিক ফেব্রিক আর ছোটখাটো অ্যাকসেসরিজ যোগ করলে স্টাইলের সঙ্গে পাবেন দিনভর আরাম। তাই এই পূজায় নিজের স্টাইলকে রাখুন ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় ভরপুর আর কাটান আনন্দে ভরা উৎসবের মুহূর্ত।